কি কি কারণে ডিপ্রেশন হয়? দেখুন মুক্তির উপায়

Any Akter
এ্যানি আক্তার
প্রকাশিত: ২:১৯ অপরাহ্ন, ০৫ মে ২০২৫ | আপডেট: ৭:২৪ অপরাহ্ন, ০৯ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

বর্তমান ব্যস্ত ও প্রতিযোগিতামূলক জীবনে মানসিক চাপ যেন আমাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে। এরই ধারাবাহিকতায় অনেকেই ভুগছেন ডিপ্রেশনে, যাকে বাংলায় বলা হয় অবসাদ বা মেজাজগত অবসন্নতা। এটি শুধুই মন খারাপ নয়  বরং এটি একটি বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত মানসিক রোগ, যা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত করে দিতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, বিশ্বজুড়ে ৩০ কোটিরও বেশি মানুষ অবসাদে (ডিপ্রেশনে) ভুগছেন। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। সমাজের নানা স্তরে ছড়িয়ে থাকা এই মানসিক অবসাদ ধীরে ধীরে এক নীরব মহামারীতে রূপ নিচ্ছে।

ডিপ্রেশন কী?

আরও পড়ুন: রঙ ফর্সাকারী ক্রিমে যে ভয়ংকর ক্ষতি হচ্ছে আপনার

ডিপ্রেশন শুধু ‘মন খারাপ’ নয়। এটি হলো দীর্ঘমেয়াদি এক মানসিক অবস্থা, যেখানে মানুষ তার দৈনন্দিন কাজ, আনন্দ, সম্পর্ক—সবকিছুর সঙ্গে সংযোগ হারাতে থাকে। এক ধরনের শূন্যতা, ব্যর্থতা, আত্মবিশ্বাসহীনতা এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে হতাশা তাকে গ্রাস করে ফেলে।

ডিপ্রেশনের প্রধান কারণসমূহ

আরও পড়ুন: সপ্তাহে কতবার ফ্রিজ বন্ধ করা উচিত, জানেন কী?

১.জিনগত প্রভাব: 

পরিবারের পূর্বপুরুষদের মধ্যে যদি কেউ ডিপ্রেশনে ভুগে থাকেন, তবে সেই রক্তের সম্পর্কের ব্যক্তিদের মধ্যে এই ঝুঁকি বেশি থাকে।

২.জীবনের ট্রমা বা দুঃখজনক ঘটনা: 

প্রিয়জনের মৃত্যু, সম্পর্কের ভাঙন, আর্থিক ক্ষতি কিংবা শারীরিক নির্যাতনের মতো ঘটনার কারণে মনোব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যেতে পারে।

৩.মানসিক চাপ ও উদ্বেগ: 

দীর্ঘদিনের পড়ালেখা, চাকরি, পারিবারিক সমস্যা বা ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা ডিপ্রেশনের জন্ম দিতে পারে।

৪.শরীরের হরমোনগত পরিবর্তন: 

সন্তান জন্মের পর, থাইরয়েডের সমস্যা কিংবা ঋতুচক্রজনিত হরমোন পরিবর্তনেও ডিপ্রেশন দেখা দিতে পারে।

৫.নেশাজাত দ্রব্যের অপব্যবহার: 

অ্যালকোহল বা মাদকাসক্তি ডিপ্রেশনের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

চেনার উপায়  ডিপ্রেশনের লক্ষণ

১.সারাদিন মন খারাপ বা শূন্য অনুভব করা

২.প্রিয় কাজেও আগ্রহ হারিয়ে ফেলা

৩.ঘুমে ব্যাঘাত বা অতিরিক্ত ঘুম

৪.অতিরিক্ত ক্লান্তি বা শক্তি হ্রাস

৫.নিজেকে অকার্যকর মনে হওয়া

৬.আত্মহত্যার চিন্তা (সর্বোচ্চ সতর্কতা প্রয়োজন)

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়

১. পর্যাপ্ত ঘুম ও খাদ্য:

প্রতিদিন অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক।

২.ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম:

প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, সাইক্লিং বা যোগব্যায়াম করলে মস্তিষ্কে ‘হ্যাপি হরমোন’ নিঃসরণ হয়, যা মন ভালো রাখে।

৩.কথা বলুন: 

প্রিয়জন বা বন্ধুদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বললে মানসিক চাপ কমে। প্রয়োজনে কাউন্সেলরের পরামর্শ নিন।

৪.নিয়মিত মেডিটেশন ও প্রার্থনা: 

মাইন্ডফুলনেস বা ধ্যান মনের শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।

৫.চিকিৎসকের সহায়তা নিন: 

উপসর্গ দীর্ঘদিন স্থায়ী হলে দেরি না করে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। প্রয়োজনে ওষুধ গ্রহণ করতে হতে পারে।

ডিপ্রেশনকে গোপন নয়, গুরুত্ব দিন

বাংলাদেশে এখনও মানসিক রোগ নিয়ে প্রচুর ভ্রান্ত ধারণা ও সামাজিক বাঁধা রয়েছে। কিন্তু মনে রাখা জরুরি ডিপ্রেশন কোনো দুর্বলতা নয়, এটি একটি চিকিৎসাযোগ্য মানসিক সমস্যা। সচেতনতা ও সহমর্মিতার মাধ্যমেই এই নীরব ঘাতককে প্রতিহত করা সম্ভব।