স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা অন্য দেশের তুলনায় কম

ডেঙ্গু মোকাবেলায় ‘সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ায়’ এবার এই ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ‘অন্যান্য দেশের তুলনায় কম’ বলে দাবি করেছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
তবে বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে ‘সন্তুষ্টির কোনো কারণ নেই’ মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, ‘একটি লোকও যদি আক্রান্ত না হত, একজন লোকও যদি মারা না যেত, তাহলে আমি সন্তুষ্ট হতাম।’
আরও পড়ুন: বিএনপি নেতৃবৃন্দের শোক, মালয়েশিয়া বিএনপির সভাপতি বাদলুর রহমানের মায়ের ইন্তেকাল
সারা দেশে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থার কার্যক্রম পর্যালোচনায় বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ কথা বলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী।
সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ওই সভায় মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করি- একটা লোকও মৃত্যুবরণ না করুক, আর আক্রান্ত না হোক। কিন্তু অসন্তুষ্টি নিয়ে আমাদের বসে থাকলে হবে না, আমাদের কাজ করতেই হবে।’
আরও পড়ুন: মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য্য অনুযয়ী, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ৩৬৯ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন; তাদের মধ্যে ২৭৮ জনই ঢাকার। এ নিয়ে চলতি বছর মোট ৬২৯৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গেলেন, তাদের মধ্যে ৪৮৯৯ জন ভর্তি হয়েছেন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে।
গত এক দিনে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে, আর চলতি বছর সব মিলিয়ে মৃত্যু হয়েছে মোট ৩৯ জনের। এর মধ্যে ঢাকায় ৩০ জন, চট্টগ্রামে ছয় জন, বরিশালে দুই জন এবং ময়মনসিংহে একজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন, তাদের শরীরে আগে থেকেই অন্য কোনো জটিল রোগ ছিল কিনা, তা পর্যালোচনা করে দেখা হবে বলে জানান তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু ছাড়া এদের অন্য কোনো রোগ ছিল না সেগুলো যাচাই করা হবে। ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল কিনা, আগে থেকেই মৃত্যুপথযাত্রী ছিল কিনা, এগুলো নজরে আনতে হবে। আমাদের জানতে হবে কোথায় ঘাটতি আছে। আমরা জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা স্বীকার করি। আমরা জনগণকে অঙ্গীকার করেছি ভালোভাবে জীবনযাপনের জন্য আমরা সম্ভাব্য সকল সুযোগগুলো কাজে লাগাব। আমরা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করার সর্বাত্মক চেষ্টা করার পরিপ্রেক্ষিতে এখনও যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে আছে।’
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৩৫৭ জন রোগী। এদের মধ্যে ঢাকায় ১০৪৯ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩০৮ জন।
বর্ষার আগেই বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার বেশি হওয়ায় এর ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সতর্ক হওয়ার পরামর্শও এসেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে।
এ বছর যে ৬২৯৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৪২৭১ জনই আক্রান্ত হয়েছেন চলতি জুন মাসের ২১ দিনে। এই সময়েই মারা গেছেন ২৬ জন।
এইডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বছর ৬২ হাজার ৩৮২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে রেকর্ড ২৮১ জনের মৃত্যু হয়।
এর আগে ২০১৯ সালে দেশের ৬৪ জেলায় এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। সরকারি হিসাবে সে বছর মৃত্যু হয়েছিল ১৬৪ জনের।
সেই রেকর্ডের কথা মনে করিয়ে দিয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘সেই তুলানায় এবার (আক্রান্তের সংখ্যা) কমাতে পেরেছি। এরপরেও কোথাও যদি ঘাটতি থাকে, কেউ তা ধরিয়ে দিলে সেটিকেও আমলে নেব।’
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মশা নিধন কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রচার চালানো এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালানো হচ্ছে। এর বাইরে অন্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা, স্থানীয় সরকারমন্ত্রীকে সেই প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক।
জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এর বাইরে করার মত আর কিছু আছে কিনা? মশা নিধনের জন্য যতগুলো অপশন রয়েছে তার সবগুলো কাজে লাগানো হচ্ছে। টেলিভিশনের মাধ্যমে টিভিসি প্রচার করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশনে সেল গঠন করা হয়েছে, সেখানে কেউ কোনো পরামর্শ দিলে এবং তা যুক্তিসংগত হলে তা আমলে নেওয়া হবে।’
রাজধানীর খালগুলো ময়লা-আবর্জনায় ভরা জানিয়ে এ বিষয়ে একজন সাংবাদিক মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাজুল ইসলাম বলেন, ‘খালে ময়লা নেই এ কথা আমি দাবি করতে পারব না। সাধরণত এইডিস মশার জন্ম খালে হয় না। আঙ্গিনা বা যেখানে কংক্রিটের স্তর আছে সেখানে পরিষ্কার পানি থাকলে এই মশার জন্ম হয়।’
কোরবানির ঈদের সময় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে জানিয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের নিবিড়ভাবে মশক নিধনের জন্য যে টিম আছে সে টিমকে কাজে লাগাতে হবে। তাদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ কীটনাশক ওষুধ রাখা আছে, সেগুলোকে ব্যবহার করবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ যন্ত্র কেনা আছে। একেকটি সিটি করপোরেশনে তিন হাজার করে লোকবল নিয়োগ দেওয়া আছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত চালাতে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে।’
দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের সময় আঙ্গিনায় কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কার করে নেবেন। বাড়ির ছাদ, এয়ারকন্ডিশনার ও ফ্রিজের নিচে যেন পানি জমা না থাকে। ঈদে বাড়ি গেলে কমোডের ঢাকনা বন্ধ করে যাবেন। টায়ার, টিউবসহ যেসব জায়গায় পানি জমে থাকতে পারে সেখানে এইডিস মশার জন্ম হতে পারে, সেসব জায়গায় যেন পানি জমে থাকতে না পারে। কারণ তিন দিনের জমা পানিতে এডিস মশার ডিম থেকে লার্ভার জন্ম হয়। তিন দিনের ভেতর যদি জমা পানি ফেলে দেই তাহলে এডিস মশা থেকে রক্ষা পেতে পারি।’