দেশে নতুন অশান্তি, অরাজকতা মব জাস্টিসের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি , রুহুল কবীর রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিএনপি একটি বিশাল রাজনৈতিক দল। এর প্রচুর সমর্থক এবং কয়েক কোটি সমর্থক হবে। এরমধ্যে আমাদের টার্গেট হচ্ছে এক কোটি সমর্থক বাড়াবো সারা বাংলাদেশে। এই টার্গেট দিয়ে আপনাদের ভাগে যেটা পড়ে সেটা আপনাদের করতে হবে। ২০-২৫ হাজার একটি উপজেলার জন্য।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) রাতে সাভার পৌর এলাকার ব্যাংক কলোনী মহল্লায় মাদ্রাসা মসজিদ প্রাঙ্গণে বিএনপি’তে নতুন সদস্য সংগ্রহ অনুষ্ঠান উদ্বোধনকালে বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
আরও পড়ুন: ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে নিবার্চন: সিইসি
এসময় রিজভী নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, সমাজের মধ্যে যারা ভালো মানুষ, সৎ মানুষ, যাদের কোনো কলক নেই। যারা কোনো মব কালচার, হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, চাঁদাবাজি, দখলবাজির সঙ্গে সর্ম্পক নেই। এই সমস্ত মানুষ কৃষক হোক, শ্রমিক হোক, বুদ্ধিজীবী হোক এলাকার স্কুলের শিক্ষক হোক কলেজের শিক্ষক হোক কিংবা পোশাক শিল্পের শ্রমিক বা মালিক হোক সবাইকে আপনারা অন্তরর্ভূক্ত করবেন। যাদের সমাজের সুনাম আছে, ভালো একটি ভাবমূর্তি আছে। তারাই হবে বিএনপি’র প্রাথমিক সদস্য।
বিএনপিতে দুষ্কৃতিকারী প্রশ্রয় না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে রিজভী বলেন, বিএনপি একটি বিশাল দল। এই দল দুই এক জন নানা ছিদ্র দিয়ে দুষ্কৃতিকারী ঢুকে যেতে পারে। কিন্তু আমাদের দেখতে হবে এই দুষ্কৃতিকারীকে বিএনপি প্রশ্রয় দেয় কি না। বিএনপি যদি প্রশ্রয় না । তেমনি বিএনপি চাঁদাবাজ, খুনি, সন্ত্রাসী, দখলদার যদি কেউ ঢুকে যায়। ওটা যদি চিহ্নিত হয়, তাতে যদি শেখ হাসিনার মত প্রশ্রয় দেওয়া না হয়। তাহলে বিএনপি একটি ভালো সংগঠন হবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ৮ কোটি ২০ লাখ টাকা ফেরত পেয়েছেন হজযাত্রীরা
এসময় তিনি আরো বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ও তারেক রহমানের একটি বৈঠক হলে জনগণের মধ্যে একটি অনিশ্চিয়তা থেকে মানুষ স্বস্তিতে আসলেন। একটি যৌথ বিবৃতি দিলেন, প্রত্যেকের প্রত্যাশা হল অবাধ সুষ্ঠ নির্বাচন। খুব বেশি দেরি হবে না হয়তো রমজান হবেই। এরপর থেকেই আমরা দেখছি দেশের বিভিন্ন জায়গায় অস্থিতিশীল হয়ে ওঠছে। খুন-জখম রেড়ে গেলো। কোনো এই পরিস্থিতি তৈরি করা হল বলে জানান তিনি।
রিজভী বলেন, আজ দেশে নতুন অশান্তি, অরাজকতা মব জাস্টিসের মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বাচ্চাদের দিয়ে বিএনপির নামে কুৎসা রটানো হচ্ছে। অথচ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা থেকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কথা আজও বাংলার মানুষের মুখে মুখে। সে সময় মানুষ দরজা খুলে ঘুমাতে পারতো। স্বাধীনভাবে মানুষ কথা বলতে পারতো।
এসময় নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি নিয়ে রিজভী আরো বলেন, আমরা কেউ জানি পিআর কি ? বাংলায় সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন । এটা আমি তো ভালো মত বুঝি না । ইউরোপের কয়েকটি দেশে প্রচলিত রয়েছে এবং জাপানে আছে। কিন্তু মাত্র ৩৭ শতাংশ এটার প্রয়োগ হয়। আর যতটুকু বুঝি তাতে মনে হয়,আমাদের মত দেশে স্থানীয় নেতা তৈরি হওয়ার আর সুযোগ থাকবে না। যে দলগুলো রাজনৈতিকভাবে একেবারে মাতা-পিতাহীন, যাদের শিকড় নাই তাদের একটু লাভ হতে পারে। এই কারণে তারেক রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পরে এসব বিষয় গুলো আনা হল। নির্বাচন পিছাতে হবে, পিআর দিতে হবে। কই এই কথা গুলো তো আগে বললেন না। এই গুলো আমার মনে হয় সম্পূর্ণরুপে বিভ্রান্তি তৈরি করা। জনগণ যে ১৬ বছর ধরে ভোট দিতে পারেনি। অবাধ সুষ্ঠ নির্বাচন হয়নি। ভোটাররা যে ঘর থেকে বের হতে পারেনি। আওয়ামীলীগের দোষর যারা পুলিশ অফিসার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তারা মাইকিং করে বলেছে, আপনারা ভোট কেন্দ্রে যাবে না। যে র্দুদিন গেছে শেখ হাসিনার নেতৃতে কোনো মানুষের নিরাপত্তা ছিল না। কোনো মানুষ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারতো না। কারো সন্তানের কোনো নিরাপত্তা নেই, কে গুম হবে , কে খুন হবে, কে বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার হবে। এই যে পরিস্থিতি এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতা আর বিএনপি’র সংগ্রামের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে গত বছর জুলাই-আগস্টে।
মানুষতো প্রত্যাশা করেছে, ভালো একটি নির্বাচন হবে। মানুষের কথা বলার অধিকার থাকবে। কণ্ঠের স্বাধীনতা থাকবে । কেউ কথা বলতে ভয় পাবে না, এইটা যদি মানুষের প্রত্যাশা সেই গণতন্ত্র কোথায়?
এসময় তারেক রহমান ও দেশ নেত্রী জিয়ার নামে অপপ্রচার প্রসঙ্গে রিজভী বলেন,আমরা ড. ইউনূস সরকারকে সমর্থন করেছি এবং এখনো সমর্থন করি। ৩০ বিলিয়ন ডলার জাতীয় রিজার্ভ হয়েছে। এটা হোক ভালো কথা। এই ৩০ বিলিয়ন ডলারের কতটুকু সাধারণ মানুষের কাছে পৌচ্ছাবে। ব্যবসা-বাণিজ্য হবে এটা দরকার। শেখ হাসিনা এক বারেই শূণ্যের কাছাকাছি নিয়ে এসেছিল টাকা পাচার ও লুট করে। জনগণের টাকা তারা একবারে এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল ৩০ বিলিয়ন ডলার থেকে শূণ্যের কোটায় নামিয়ে নিয়ে এসেছিল। এটা তো উন্নতির কথা, কিন্তু আমরা রাজনৈতিক উন্নতি চাই। জনগণ তার ভোট দিইক,অবাধ সুষ্ঠ নির্বাচন হোক, মানুষ নিভয়ে গিয়ে যাতে ভোট দিতে পারে। তা না করে তারেক রহমান ও দেশ নেত্রী জিয়ার নামে আপনারা অপপ্রচার করছেন। সামাজিক যোগাযোগ গণমাধ্যমে আপনারা কুৎসা রটাচ্ছেন, নানা কথা বলছেন প্রযুক্তির ব্যবহার করে। এই উদ্দেশ্য তো আপনাদের ভালো নয়। আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করি।
এসময় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির কেন্দ্রী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) সায়েদুল আলম বাবুল,ঢাকা-১৯ এর সাবেক সংসদ সদস্য ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, সাভারপৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার শাহ মাইনুল হোসেন বিল্টুসহ বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা উপস্থিত ছিলন।