ঢাকায় ৩ সমাবেশ আজ
শক্তিমত্তা দেখাতে বড় শোডাউনের প্রস্ততি

- এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সময় নিয়ে বের হওয়ার আহবান
- জনসাধারণকে সমাবেশস্থল এড়িয়ে চলার পরামর্শ ডিএমপির
- ভোগান্তির আশঙ্কায় ছাত্রদলের অগ্রিম দুঃখ প্রকাশ।
ঢাকায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এবং সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে আজ। তিন সংগঠনই শক্তিমত্তা দেখাতে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে। এনসিপি দেশজুড়ে মাসব্যাপী কর্মসূচি পালন করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশের আয়োজন করছে। ছাত্রদলও সমাবেশ সফল করতে সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীদের আনতে বিশেষ ট্রেনসহ নানান যানবাহন ভাড়া করছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’ ঘোষণা দেওয়ার কথা জানিয়েছে। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আজ ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ ঘোষণা দেওয়া হবে। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার পর এনসিপির ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট দিয়ে এ কথা জানানো হয়। নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে এনসিপি। দলটির প্রত্যাশা, ‘ইতিহাসের এ সন্ধিক্ষণে’ সবার সঙ্গে দেখা হবে।
এর আগে গত বুধবার বিকেলে নরসিংদী শহরের পৌরসভার সামনে আয়োজিত পথসভায় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ৩ আগস্ট ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার ঘোষণা দেওয়া হবে। সেদিন সবাইকে শহীদ মিনারে যোগদানের আমন্ত্রণ জানিয়ে নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘আপনারা সেদিন সঙ্গে থাকলে সব দাবি আমরা আদায় করে ছাড়ব।’
আরও পড়ুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ, শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি
এদিকে রাজধানীর শাহবাগে আজ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এ সমাবেশকে ঘিরে সৃষ্টি হতে যাওয়া জনদুর্ভোগের জন্য রাজধানীবাসীর প্রতি অগ্রিম দুঃখ প্রকাশ করেছে সংগঠনটি। গতকাল শনিবার সংগঠনটির ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বিবৃতির মাধ্যমে দুঃখ প্রকাশ করেছে।
বিবৃতিতে তারা উল্লেখ করে, “আগামীকাল ৩ আগস্ট ২০২৫, রোববারে রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। গত জুন মাসে আমরা আমাদের জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে ৩৬ দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণায় শুরুতে ৩ আগস্টে জাতীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করি। কিন্তু পরবর্তীতে জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা ৩ আগস্টে শহীদ মিনারে তাদের সমাবেশ করার বিষয়ে আমাদের নেতাতের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে একাধিকবার যোগাযোগ ও অনুরোধ করেন।
আরও পড়ুন: আগামী নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বড় চ্যালেঞ্জ: সিইসি
শহীদ মিনারের সমাবেশের বিষয়ে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস থেকে অনুমতিও গ্রহণ করেছিলাম। এদিনে শহীদ মিনারে সমাবেশ করার বিষয়ে আমরাই ছিলাম একমাত্র বৈধ দাবিদার। কিন্তু পরবর্তীতে একটি উদার, গণতান্ত্রিক, পরমতসহিষ্ণু, সব মত ও পথের সহাবস্থানে বিশ্বাসী ছাত্রসংগঠন হিসেবে আমরা শহীদ মিনারে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে শাহবাগে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।
ব্যস্ত রাজধানীতে কর্মদিবসে সমাবেশের জনভোগান্তি সম্পর্কে আমরা অবগত। এতদসত্ত্বেও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এ গুরুত্বপূর্ণ স্মরণীয় দিনটিতে আমাদের ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির বৃহৎ ঐক্যের স্বার্থে বৃহত্তম ছাত্রসংগঠন হিসেবে দায়িত্বশীলতা ও উদারতার জায়গা থেকে সমাবেশের স্থান পরিবর্তন করতে হয়েছে। আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আগামীকালের যেকোনো ধরনের জনদুর্ভোগের জন্য অগ্রীম দুঃখ প্রকাশ করছি। প্রত্যাশা করছি, সম্মানিত নগরবাসী বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করবেন। একটি দায়িত্বশীল ছাত্রসংগঠন হিসেবে ভবিষ্যতে এই বিষয়ে আমরা আরও অধিকতর সচেতন থাকব, ইনশাআল্লাহ।”
অপরদিকে জনসাধারণকে শাহবাগ এলাকা এড়িয়ে চলতে অনুরোধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল ডিএমপির কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর সই করা এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়। এতে শহীদ মিনার সংলগ্ন রাস্তা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশ পথগুলোও এড়িয়ে চলতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি এইচএসসি ও সমমান এবং বিসিএস পরীক্ষার্থীদের যথেষ্ট সময় নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে গণবিজ্ঞপ্তিতে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘ঢাকা মহানগরবাসীর অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, ৩ আগস্ট রোববার দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শাহবাগ মোড়ে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে ছাত্রদলের উদ্যোগে ‘ছাত্র সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এনসিপির ‘জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের’ দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একটি জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
এতে আরও বলা হয়, সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর উদ্যোগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১ থেকে ৪ আগস্ট প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ৩৬ জুলাই কালচারাল ফেস্ট ‘জুলাই জাগরণ’ অনুষ্ঠান চলছে। এছাড়াও আগামীকাল ঢাকার বিভিন্ন কেন্দ্রে এইচএসসি ও সমমান এবং বিসিএস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সভা-সমাবেশ ও অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে শাহবাগ, শহীদ মিনার ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় প্রচুর জনসমাগম ঘটবে। ফলে ওই এলাকা বিশেষ করে শাহবাগ ক্রসিং দিয়ে যানচলাচল করানো সম্ভব হবে না। এ অবস্থায় ঢাকা মহানগরবাসীকে এই এলাকাগুলো এড়িয়ে চলাচলের অনুরোধ করা হলো।
হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়: সোনারগাঁও ক্রসিং বা বাংলামোটর ক্রসিং হয়ে উত্তর দিক থেকে আসা যানবাহন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রসিং এ সোজা শাহবাগের দিকে না গিয়ে বামে মোড় নিয়ে হেয়ার রোড বা মিন্টু রোড হয়ে যাতায়াত করবে।
কাটাবন মোড়: সাইন্সল্যাব ক্রসিং হয়ে পশ্চিম দিক থেকে আসা যানবাহন কাটাবন মোড় থেকে শাহবাগের দিকে না গিয়ে ডানে মোড় নিয়ে নীলক্ষেত বা পলাশী হয়ে অথবা কাটাবন মোড় থেকে বামে মোড় নিয়ে সোনারগাঁও (হাতিরপুল) রোড হয়ে বাংলামোটর লিংক রোড দিয়ে চলাচল করবে।
মৎস্য ভবন মোড়: হাইকোর্ট বা কদম ফোয়ারা ক্রসিং হয়ে আসা যানবাহন মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগের দিকে না গিয়ে সোজা হেয়ার রোড বা শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সরণী (মগবাজার রোড) হয়ে চলাচল করবে। অপরদিকে কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং হয়ে উত্তর দিক থেকে আসা যানবাহন মৎস্যভবন ক্রসিং থেকে শাহবাগের দিকে না গিয়ে সোজা হাইকোর্ট হয়ে গুলিস্তান বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে চলাচল করবে।
টিএসসি বা রাজু ভাস্কর্য ক্রসিং: নীলক্ষেত ক্রসিং বা দোয়েল চত্ত্বর ক্রসিং থেকে আসা যানবাহন টিএসটি বা রাজু ভাস্কর্য ক্রসিংয়ে এসে শাহবাগের দিকে না গিয়ে দোয়েল চত্ত্বর বা নীলক্ষেত ক্রসিং হয়ে চলাচল করবে।
দুই ধরনের প্রস্তুতি এনসিপির:
জুলাই ঘোষণাপত্রের দাবিতে আজ বিকাল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এতে ঢাকাসহ সারা দেশের নেতাকর্মীদের অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। সমাবেশ ঘিরে দুই ধরনের প্রস্তুতি রেখেছে দলটির হাইকমান্ড। এরইমধ্যে সরকার ঘোষণাপত্র না দিলে তারা নিজেরাই ঘোষণাপত্র দেবে। আর সরকারের পক্ষ থেকে আজ-কালের মধ্যে দিয়ে দিলে সমাবেশ থেকেই প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। এদিন ফ্যাসিস্ট পতনের এক দফা কর্মসূচি দিবসও উদযাপন করা করা হবে। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের রূপরেখা দেবেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
এনসিপি সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে সমাবেশের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এ সমাবেশকে বাস্তবায়নের জন্য ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। শুরুতে শুধু ঢাকার জনশক্তির অংশগ্রহণের কথা থাকলেও দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রার স্পিরিটকে ধরে রাখতে সারা দেশের নেতাকর্মীদেরও সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।
ঘোষণাপত্র নিয়ে সরকারের অবস্থান:
বিভিন্ন মহল থেকে দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আগস্ট মাসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার কথা জানানো হয়েছিল। তবে এ ঘোষণা ৫ আগস্টের আগেই দেওয়ার দাবিতে গত কয়েকদিন রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছিল আহত জুলাই যোদ্ধাসহ বিভিন্ন সংগঠন। এরই মধ্যে গত ৩১ জুলাই তিনটি রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির কাছে জুলাই ঘোষণাপত্রের ২৬ দফা খসড়া পাঠিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে দলগুলো তাদের সংশোধিত মতামত সরকারকে পাঠিয়েছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার (১ আগস্ট) রাতে দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম জানিয়েছেন ৫ আগস্টের মধ্যে আসছে কাঙ্ক্ষিত জুলাই ঘোষণাপত্র।
গত ২৯ জুন সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম জানান, এক মাসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র না দিলে ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় মিনার থেকে নিজেই ঘোষণা দেবেন।
সে অনুযায়ী গত এক মাস তারা নিজেদের রূপরেখা তৈরি করে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন। তিনি বলেন, ঘোষণাপত্রের খসড়া আমরাও প্রস্তুত রেখেছি। আজকালের মধ্যে সরকার ঘোষণা না দিলে আমাদের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে পাঠ করবেন। অবশ্য এরই মধ্যে যেহেতু দুই উপদেষ্টা বলেছেন, সরকার ঘোষণাপত্র দেবে। সে বিষয়টিও আমাদের মাথায় আছে। দিয়ে দিলে আমরা এর বিভিন্ন দিক নিয়ে আমাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবো। শহীদ মিনার থেকেই নির্ধারণ হবে পরবর্তী কর্মপন্থা।
জাবেদ রাসিন জানান, সমাবেশে স্বৈরাচার হঁটানোর এক দফা দিবস উদযাপন করা হবে। আগামী দিনের নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের রূপরেখা দেবেন নাহিদ ইসলাম।
শাহবাগে আজ বড় সমাবেশের প্রস্তুতি ছাত্রদলের:
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ‘ছাত্র সমাবেশ’ আজ। এদিন দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে এই কর্মসূচি পালন করবে সংগঠনটি। সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন নেতাকর্মীরা। গঠন করা হয়েছে প্রায় ৯০টি সাংগঠনিক টিম। দেশের সব জেলা ও মহানগরের নেতাকর্মীদের এতে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। কর্মসূচি বাস্তবায়নে সাংগঠনিক টিমের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক চলছে। সারা দেশে থেকে নেতাকর্মীদের সমাগম ঘটিয়ে শক্তিমত্তা প্রদর্শনের পরিকল্পনা রয়েছে সংগঠনটির। তবে গতানুগতিক কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে এবারের ছাত্র সমাবেশ কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে করতে চান নেতারা। এজন্য সমাবেশে অংশগ্রহণ নিয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে ছাত্রদল।
কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে এবারের ছাত্র সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সমাবেশস্থলে কোনো ধরনের ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড থাকবে না। ব্যক্তিগত শোডাউনও নাকচ করা হয়েছে। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতদেরও এই সমাবেশে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা এসব তথ্য জানান।
এদিকে ঢাকায় ছাত্র সমাবেশে অংশগ্রহণ নিয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শুক্রবার ৬ দফা নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। এর মধ্যে রয়েছে-সমাবেশে কোনো ধরনের ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড নিয়ে আসা যাবে না। সমাবেশের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক ইউনিটকে থাকতে হবে। কাঁটাবন মোড় থেকে আজিজ সুপার মার্কেট ও পিজি হাসপাতালের মাঝের গলি দিয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি সেবায় নিয়োজিত পরিবহণকে চলাচলে সার্বিক সহায়তা করতে হবে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীকে বহনকারী কোনো ইউনিটের গাড়ি কোনো অবস্থাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না। ব্যক্তিগত শোডাউন ও মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসা যাবে না। সমাবেশ শেষে সংশ্লিষ্ট ইউনিটের নির্ধারিত স্থান পরিষ্কার করে যেতে হবে।
নেতাকর্মীরা জানান, পূর্বঘোষিত এই কর্মসূচি ঘিরে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে ছাত্রদল। দেশের সবচেয়ে বড় ছাত্র সংগঠন হিসাবে এদিন ছাত্রদল নিজেদের সমর্থন আর শক্তিমত্তা দেখানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এজন্য সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে সারাদেশে সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়েছে। এসব টিমের সঙ্গে দফায় দফায় কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠক করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার নয়াপল্টনে ভাসানী ভবনে কেন্দ্রীয় সংসদের সঙ্গে ঢাকা বিভাগের সব জেলা ও মহানগর ইউনিটের ‘সুপার ফাইভ’ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। একই দিন বিকাল ৪টায় একই স্থানে ঢাকা বিভাগ ছাড়া সারাদেশের জেলা ও মহানগর ইউনিটের সভাপতি/আহ্বায়ক এবং সাধারণ সম্পাদক/সদস্য সচিবদের নিয়ে আরেকটি সভা হয়। ওই দিন বেলা ১১টায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সুপার ফাইভ নেতাদের সঙ্গে এবং দুপুর ১২টায় ঢাকা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ এবং বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের সুপার ফাইভ নেতাদের সঙ্গে আরেকটি বৈঠক হয়। সেখানে সমাবেশ সফল করতে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা জানান, টিমের সদস্যরা জেলা, মহানগর ছাড়াও উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সমাবেশে উপস্থিত হতে সহায়তা করবেন। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার পতনে আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রদল রাজপথের ভ্যানগার্ড হিসাবে কাজ করেছে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনেও ছিল অগ্রণী ভূমিকা। ওই আন্দোলনে শুধু ছাত্রদলেরই ১৪২ নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। এরপরও কিছু মহল ওই আন্দোলনকে নিজেদের চেতনা হিসাবে বিক্রি করার অপচেষ্টা করছে। তারা জুলাই আন্দোলনকে কোনো একক পক্ষের হতে দেবেন না। এটা ছিল দেশের সব ধর্ম, বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে আন্দোলন। তারা এই সমাবেশ থেকে জুলাই আন্দোলনে আত্মাহুতি দেওয়া জাতির বীর সন্তানদের স্মরণ করবেন। এখান থেকে দেশ গঠনে ছাত্রসমাজকে সম্পৃক্ত করতে উদাত্ত আহ্বান জানাবেন। কোনো কুচক্রী মহলের প্ররোচনায় যাতে কেউ বিভ্রান্ত না হন সেই আহ্বানও থাকবে। বিগত দিনের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার দাবিকেও এই সমাবেশ থেকে উচ্চকণ্ঠ দাবিতে পরিণত করতে চান তারা।