তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তারেক রহমানের জন্য দলের পক্ষ থেকেও নিরাপত্তা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে রাজধানীতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
আরও পড়ুন: ২৫ ডিসেম্বর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘তারেক রহমানের দেশে নিরাপদ আগমন নিশ্চিত করার জন্য ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সম্পূর্ণ সতর্ক ও সমন্বিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দীর্ঘ ১৭ বছর পর বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসভবন পর্যন্ত সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই নিরাপত্তা কার্যক্রম কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সদরদপ্তর থেকে তদারকি করা হবে।
আরও পড়ুন: সুপ্রীম কোর্টের স্টে থাকা সত্বেও রেজিস্ট্রেশন বিভাগ নিয়ে ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্তে নানা প্রশ্ন
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, তারেক রহমানের বাসভবন, অফিস এলাকা এবং চলাচলের পুরো পথজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক ও এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং প্রয়োজনে আরও সদস্য নামানোর প্রস্তুতিও রাখা হয়েছে। তারেক রহমানের চলাচলের সময় প্রতিটি ধাপ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এ কার্যক্রম ডিএমপি সদরদপ্তর থেকেই সরাসরি তদারকি করা হবে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব বৈঠকের একটিতে নেতৃত্ব দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিজেই। বৈঠকে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকি পর্যালোচনা করে সে অনুযায়ী কঠোর নিরাপত্তা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। পরবর্তীতে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনাও পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, বিশেষ ব্যক্তি হিসেবে তারেক রহমানের নিরাপত্তায় ডিএমপি প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিলেও সার্বিক নিরাপত্তার মূল দায়িত্বে থাকছে বিএনপি চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ)। পুলিশ ও বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় করে সিএসএফ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) মধ্যরাত থেকেই পুলিশের পাহারা শুরু হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশ, সাদা পোশাকধারী ও পোশাকধারী পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন স্তরে দায়িত্ব পালন করছেন। ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমান দেশে ফেরার দিন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে থ্রি হান্ড্রেড ফিট, এভারকেয়ার হাসপাতাল হয়ে গুলশান অ্যাভিনিউ পর্যন্ত পুলিশ ও বিভিন্ন সংস্থার কয়েক হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে।
গোয়েন্দা সূত্র অনুযায়ী, বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত প্রতিটি থানা এলাকায় পুলিশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। পুলিশের ‘স্পেশাল স্কট’ ইউনিটও দায়িত্ব পালন করবে। পাশাপাশি মোড়ে মোড়ে পুলিশি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। বর্তমানে গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় অন্তত নয়টি চেকপোস্টে ২৪ ঘণ্টা দেড় শতাধিক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। তারেক রহমান দেশে ফেরার পর গুলশান এলাকায় আরও অন্তত তিনটি চেকপোস্ট বাড়তে পারে। তার বাসা ও আশপাশের এলাকায় প্রতিদিন দেড় শতাধিক পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য মোতায়েন থাকবেন। প্রয়োজনে বাসভবন থেকে যাতায়াতের সময় তিন শতাধিক সদস্য নিরাপত্তায় যুক্ত থাকবেন।
ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. শাহরিয়ার আলী বলেন, তারেক রহমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ডিএমপি সদরদপ্তর থেকে সরাসরি তদারকি করা হবে। কোনো একটি নির্দিষ্ট বিভাগ নয়, দায়িত্ব ভাগ করে নিয়ে ডিএমপির বিভিন্ন ইউনিট এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। ইতোমধ্যে নিরাপত্তা কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, গুলশান অ্যাভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাসায় উঠবেন তারেক রহমান। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’র পাশেই এই বাড়িটি অবস্থিত। বাসাটি প্রায় প্রস্তুত থাকলেও কোনো কারণে পুরোপুরি প্রস্তুত না হলে তিনি আপাতত মায়ের বাসা ফিরোজায় উঠবেন। দেশে ফেরার পর গুলশানের ৮৬ নম্বর রোডে অবস্থিত বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকেই তিনি দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
বিএনপি সূত্রে আরও জানা যায়, তারেক রহমান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ২৫ ডিসেম্বর বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে। দেশে ফেরার জন্য তিনি ট্রাভেল পাস পেয়েছেন এবং টিকিটও কাটা হয়েছে। তার প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে বিএনপি দেশজুড়ে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে।





