পাঠ্যবইয়ে জিয়াউর রহমানকে খাটো করে তুলে ধরা হয়েছে: রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, নবম-দশম শ্রেণির পৌরনীতি নতুন বইয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ভুল তথ্য তুলে ধরেছে। শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের পতনের পরও পাঠ্যবইয়ে পতিত আওয়ামী লীগকে হিরো আর বিএনপিকে হেয় প্রতিপন্ন করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছে।
আরও পড়ুন: অসহায় পরিবারের দুই শিশুকে চিকিৎসা সহায়তা ও অটোরিকশা দিলেন তারেক রহমান
তিনি আরও বলেন, ছাত্র-জনতার দুনিয়া কাঁপানো রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মুখে শিশুঘাতি, কিশোরঘাতি, নারীঘাতি, শ্রমিকঘাতি গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের স্বস্তি-শান্তির অভাবনীয় স্বর্ণদ্বার উন্মোচিত হলেও রাষ্ট্র ও সরকারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘাপটি মেরে বসে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসর’রা সবকিছু লন্ডভন্ড করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের তৃণমূল প্রশাসন থেকে সচিবালয় পর্যন্ত প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী নামধারী পতিত স্বৈরাচার হাসিনার সহযোগী ছাত্রলীগ-যুবলীগ আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা গণঅভ্যুত্থানের সর্বব্যাপী অর্জন ম্লান করে দিতে অস্টপ্রহর তৎপরতায় মগ্ন। তারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করে চলেছে ছদ্মবেশে। তাদের পালিয়ে যাওয়া গডমাদার হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিগত ১৬ বছর অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার কারণে প্রশাসনে ফ্যাসিবাদের দোসরদের শিকড় অনেক গভীর পর্যন্ত গ্রোথিত হয়েছে। প্রত্যেকটা সরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতের নীচের স্তর থেকে একেবারে উপরের স্তর পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসর। তারা সুযোগ খুঁজছে ছোবল মারার। এই দোসররা দিবা স্বপ্ন দেখছে, তাদের প্রভূ ভারত সরকার হাসিনাকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে, বাতিল হওয়া ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, প্রোপাগান্ডা করে আবারও কিছু একটা করে ফেলতে পারে। কিন্তু সেই স্বপ্নের গুড়ে বালি। সাত মণ ঘিও পুড়বে না, আর রাধাও নাচবে না।
বিএনপির মুখপাত্র বলেন, পতিত স্বৈরশাসকের অনুচর’রা হাসিনা পালানোর পর ভীষণ মনকষ্ট নিয়ে দিনরাত্রি চক্রান্তে মেতে থাকছে। তারাই পাঠ্যবইয়ে সর্বাগ্রে আওয়ামী লীগের শ্রেষ্ঠত্ব, স্তুতি বন্দনা আর বিএনপি সেনা ছাউনিতে জন্ম বলে হেয় প্রতিপন্ন -বিতর্কিত করার মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মগজ ধোলাইয়ের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। নতুন শিক্ষাবর্ষে পরিমার্জিত নতুন করে ছাপানো নবম-দশম শ্রেণির ‘পৌরনীতি ও নাগরিকতা’ বইয়ের ৭৩ নম্বর পৃষ্ঠার ‘গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন ব্যবস্থা’ অধ্যায়ে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ সম্পর্কে হাসিনার অলিগার্করা লিখেছে, আওয়ামী লীগ এ দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। আর বিএনপিকে নিয়ে অতিকথন, অপপ্রচার আর কুৎসা রটানোর বিরতিহীন যে ধারাভাষ্য চালানো হয়েছে শেখ হাসিনার ১৬ বছরে তারই প্রতিফলন এখনও আমরা দেখছি পাঠ্যপুস্তকে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে ‘সাবেক রাষ্ট্রপতি’র পরিবর্তে ‘সাবেক সেনাপ্রধান’ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সাবেক সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের "সামরিক শাসনামলে" ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠিত হয়। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ভেতরে-বাইরে ঘাপটি মেরে বসে থাকা আওয়ামী ভূতেরা শেখ হাসিনারই মিথ্যা বয়ান লিপিবদ্ধ করেছে পাঠ্য পুস্তকে।
আরও পড়ুন: একটি গোষ্ঠী মব সন্ত্রাসকে ক্যানসারে পরিণত করেছে: রিজভী
রিজভী বলেন, বর্তমানে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, মাফিয়া প্রধান পালালেও মাফিয়া চক্রের অনেকেই এখনো রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বহাল তবিয়তে ঘাপটি মেরে রয়েছে। সুযোগ পেলেই তারা স্বরূপে আভির্ভূত হচ্ছে। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, দেশের জনগণের ভালোবাসায় ধন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির বিরুদ্ধে একটি গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকেও বিএনপি সম্পর্কে ভুল তথ্য সন্নিবেশিত করা হচ্ছে। আমরা রাজনীতি সচেতন দেশবাসীর সামনে স্পষ্টভাষায় জানিয়ে দিতে চাই, বিএনপি সেনাছাউনিতে জন্ম হওয়া কোনো দল নয়। সামরিক প্রশাসক কিংবা সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে নয় বরং ঢাকার রমনা রেস্তোরায় এক সংবাদ সম্মেলনে ১৯৭৮ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যখন বিএনপি গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন তখন তিনি ছিলেন দেশের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। সুতরাং বিএনপি সেনাছাউনিতে গঠিত হয়েছে এই তথ্য ইতিহাস বিকৃতি ছাড়া কিছুই নয়। পাঠ্য বইয়ে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা জরুরি, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশে সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। গঠন করেছিলেন একদলীয় বাকশাল। এরপর ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসের পট পরিবর্তনের দেশে সামরিক শাসন জারি করে খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। এ সময় দেশে কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না। এমনকি একদলীয় অভিশপ্ত বাকশালের নাম নেয়ারও কেউ ছিল না। দেশের এমন পরিস্থিতিতে জিয়াউর রহমান দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। জারি করেন 'রাজনৈতিক দলবিধি ১৯৭৬'। রাজনৈতিক দলবিধির আওতায় কয়েক ডজন রাজনৈতিক দল স্বনামে রাজনীতি করার অনুমতি চেয়ে জিয়াউর রহমানের কাছে আবেদন করে। ১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগসহ কমপক্ষে ১৯টি রাজনৈতিক দলকে দেশে স্বনামে রাজনীতি করার অনুমতি দেয়। অন্য শুরু হয় বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথচলা। এইসব তথ্য প্রমাণে স্পষ্ট, জিয়াউর রহমান আগে নিজে দল গঠন করেননি। বরং অন্য সকল দলকে দেশে স্বনামে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়ে, দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করে, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালে যখন বিএনপি গঠনের ঘোষণা দেন তখন তিনি আর সেনা প্রধান নন বরং তিনি ছিলেন জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। এইসব তথ্য প্রমাণ বিশ্লেষণ করলে এটি স্পষ্ট, বিএনপি প্রতিষ্ঠার সঙ্গে ক্ষমতা নয় বরং দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নিবিড় সম্পর্ক ছিল। এইসব সত্য ইতিহাস কেন এখন পাঠপুস্তকে সন্নিবেশিত হবে না ? এইসব তথ্য জানার পর বিএনপি সম্পর্কে যারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে তারা গভীর চক্রান্তে নিয়োজিত রয়েছে। তিনি এর নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে পাঠ্যপুস্তক সংশোধনের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেযারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদীন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কেন্দ্রীয নেতা সেলিমুজ্জামান সেলিম, আসাদুল করিম শাহীন, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী ও তারিকুল আলম তেনজিং প্রমুখ।