শেখ হাসিনাকে উৎখাত করা বৈধ ছিল, কোনো ষড়যন্ত্র হয়নি: নাহিদ ইসলাম

Sanchoy Biswas
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ৭:৪৬ অপরাহ্ন, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৫:১১ পূর্বাহ্ন, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উৎখাত করার প্রস্তুতি নেওয়া বৈধ ছিল এবং সেখানে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র ছিল না। তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে গুলি চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এক দফা ঘোষণা করে তাকে উৎখাত করার প্রস্তুতি নেওয়া ছিল বৈধ; এখানে ষড়যন্ত্রের কিছু নেই।”

নাহিদ ইসলাম এই মন্তব্য করেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজ রোববার দুপুরে সাক্ষ্য ও জেরা শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়। এর আগে সকালে ৪৭ নম্বর সাক্ষী হিসেবে তাকে জেরা করেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।

আরও পড়ুন: সিঙ্গাপুরে গেলেন নুরুল হক নুর

জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সেই সুযোগও আছে। আমরাও আবেদন জানাব। বিচারের মধ্য দিয়েই তাদের বিষয়ে ফয়সালা করতে হবে। সরকার তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করেছে। তাই বিচারের আওতায় এনে দলগতভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। এছাড়া ফ্যাসিবাদের দোসরদেরও বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “ট্রাইব্যুনালের কাছে এখন যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ এসেছে। আমরা ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন জানাব। রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করতে, ক্ষমতায় টিকে থাকতে শেখ হাসিনা জনগণকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এটি শুধু ব্যক্তিগত অপরাধ নয়, বরং রাজনৈতিক অপরাধ। তাই জনগণই তাকে উৎখাত করেছে। জুলাই-আগস্টের অপরাধ পৃথিবীর ইতিহাসে লেখা থাকবে।”

আরও পড়ুন: নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে যাচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি আজ

এ সময় তিনি দাবি করেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে দেশি-বিদেশি শক্তির কোনো ইন্ধন ছিল না। “জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে প্রতিরোধ করেছে এবং সফল হয়েছে। শেখ হাসিনা ও সহযোগীরা বিচারের মুখোমুখি হতে ভয় পেয়ে দেশত্যাগ করেছেন,” বলেন নাহিদ।

উল্লেখ্য, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি হিসেবে করা মামলায় ৪৭তম সাক্ষী হিসেবে নাহিদ ইসলামের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন।

জেরার সময় নাহিদ বলেন, “ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হওয়ার প্রস্তাব দেওয়ার পেছনে দেশি-বিদেশি শক্তির ইন্ধন ছিল না। ৩ আগস্টের সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার ফলশ্রুতি নয়। আমাদের আন্দোলনের পেছনে দেশি-বিদেশি শক্তির কোনো হাত ছিল না।”

প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হলেও ট্রাইব্যুনাল নাহিদকে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেন। এর পাশাপাশি শেখ হাসিনার আইনজীবী মো. আমির হোসেনও জানান, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি; তিনি বাধ্য হয়ে ভারতে চলে যাননি।

নাহিদ ইসলাম বলেন, “এটি সত্য নয় যে শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট পদত্যাগ করেননি, এটাও সত্য নয় যে তিনি বাধ্য হয়ে ভারতে চলে যাননি। আমাদের আন্দোলন জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধের ফলশ্রুতি।”