ওসির টোকেন বাণিজ্য, কৃষকদের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি

সাতকানিয়ায় রাতের আঁধারে কৃষি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা

Any Akter
চট্টগ্রাম অফিস, বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ২:৩৭ অপরাহ্ন, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫ | আপডেট: ৮:৫৫ পূর্বাহ্ন, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার উপজেলা সহ বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষি জমির মাটি জোরপূর্বক কেটে নিচ্ছে সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা। পুলিশ ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্বৃত্ত মাটি ব্যবসায়ী চক্র রাতের আঁধারে বেকু ব লাগিয়ে জোরপূর্বক মাঠে খেতে নিচ্ছে। মাটিকাটা বন্ধে কৃষক বাধা দিলে সন্ত্রাসী হামলা শিকার হচ্ছে। এমনকি পুলিশের কাছে অভিযোগ দিলে প্রতিকার তো দূরের কথা পুলিশ উল্টো মিথ্যা মামলার হুমকি দিয়ে কৃষকদের হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিস্তীর্ণ  কৃষি জমির মাটি কাটা বন্ধে এলাকার কৃষকরা থানা ও জেলা প্রশাসনের কোন সহায়তা না পেয়ে উচ্চ আদালতে মামলা করলে আদালত নিষেধাজ্ঞা দেয়। হাইকোর্টের সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে দুর্বৃত্তরা প্রতিদিন রাতেই শত শত টাক লাগিয়ে মাটি কেটে নিচ্ছে। এতে বিস্তীর্ণ কিছু জমি গর্ত হয়ে ফসলি উৎপাদনের ক্ষমতা হারাচ্ছে। নিঃস্ব হচ্ছে কৃষক। স্থানীয় কৃষকরা দুর্বৃত্তদের ভয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিকার চেয়েছে।

কৃষি জমির মাটিকাটা বন্ধে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে স্থানীয় প্রশাসন ও দূর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আবেদন করেছে। আবেদন সূত্র জানা যায় চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি মোস্তফা কামাল খান এর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, তিনি তার দায়িত্বে থাকা সাতকানিয়া থানায় ব্যাপক দুর্নীতি ও বেআইনী কার্যকলাপ পরিচালনা করছেন।

আরও পড়ুন: সাদা পাথর রক্ষায় প্রশাসনের ৫ দফা সিদ্ধান্ত

অভিযোগ উঠেছে যে, ওসি মাটি কাটার টোকেন বাণিজ্য চালিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বিশেষভাবে, প্রতিটি মাটি কাটার টোকেনের মূল্য ৪০,০০০ টাকা নির্ধারণ করে তিনি অবৈধভাবে অর্থ সংগ্রহ করেছেন। এমনকি, কৃষি জমির মাটি কাটার বিষয়ে হাইকোর্টের দেয়া নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে, কৃষি জমির উপর অবৈধভাবে মাটি কাটার অনুমতি দিয়েছেন।

এছাড়া, ২০২৪ সালে হাইকোর্টের ৩৪৭৪/২৪ নং রীটের প্রেক্ষিতে কৃষি জমির টপসয়েল না কাটার আদেশ দেয়া হলেও, ওসি মোস্তফা কামাল খান এই আদালতের আদেশ উপেক্ষা করেছেন এবং অবৈধভাবে মাটি কাটার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন, যা দেশের পরিবেশ এবং কৃষি খাতের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।। স্থানীয় কৃষকরা তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালে তারা প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন এবং মিথ্যা মামলা দেয়ারও হুমকি এসেছে বলে অভিযোগ করেছেন। এমনকি, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও মোটা অংকের চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। টাকা না দিলে, মিথ্যা মামলার মাধ্যমে তাদের হয়রানী করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: ‎পাবনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ডাকা পরিবহণ ধর্মঘট প্রত্যাহার

এছাড়াও, সাতকানিয়া থানার অনেক মামলাভুক্ত আসামীদের বিরুদ্ধে ওসি মোস্তফা কামাল খান টাকার বিনিময়ে গ্রেফতার করা থেকে বিরত রয়েছেন। তার অধীনে, আওয়ামী লীগ নেতা এবং অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও নিরাপদে চলাফেরা করছেন।গত বছর সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নে একটি মারধরের ঘটনা ঘটে, যেখানে স্থানীয় বাসিন্দারা আহত হন এবং একটি মোটর সাইকেল পুড়িয়ে ফেলা হয়। তবে, এ বিষয়ে কোন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং, টাকা নিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিশেষভাবে, এক স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. ফরিদ উদ্দিন, যিনি PBM ব্রিক ফিল্ডের মালিক এবং সাতকানিয়া ব্রিকফিল্ড সমিতির সাধারণ সম্পাদক, অভিযোগ করেছেন যে, তিনি অফিসার ইনচার্জের কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা চাঁদা দিয়ে কৃষি জমির মাটি কাটার অবৈধ টোকেন নিয়েছেন। এতে, ওই ব্যবসায়ী তাঁর ব্রিকফিল্ডে অবৈধভাবে মাটি জমা করেছেন, যা কৃষি জমির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

এতসব অভিযোগের পর, সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তফা কামাল খান এর বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে। তারা আশা করছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন এবং এই অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেবে।

সাতকানিয়া সহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার বিস্তীর্ণ কৃষি জমি থেকে দুর্বৃত্তদের জোরপূর্বক মাটি কাটার বিষয়ে চট্টগ্রামের পুলিশের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি জানান মাটিকাটা ভরাট ভূমি সংক্রান্ত বিষয়টি জেলা প্রশাসন ও ভূমি বিভাগ দেখভালো করেন। জোরপূর্বক মাটি কাটার বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। তবে আমাদের পুলিশ সদস্য বা থানার কেউ যদি মাটি কাটার জন্য টোকেন বাণিজ্য করে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।