গভীর রাতে জোর করে বাসায় ঢুকে ভাংচুর
কোটি টাকা চাঁদাবাজির ঘটনায় কলাবাগান থানার ওসি সহ ২ এসআই বরখাস্ত

কলাবাগান থানার অফিসার ইনচার্জ মুক্তারুজ্জামান সহ ২ এসআই এর বিরুদ্ধে গভীর রাতে জোরপূর্বক বাসায় ঢুকে কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ করেছেন শিক্ষাবিদ কলামিস্ট ডক্টর আব্দুল ওয়াদুদ। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে রোববার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ওসি ও দুই দারোগাকে প্রশাসনিক কারণে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র উপ পুলিশ কমিশনার তালেবুর রহমান জানান, প্রশাসনিক কারণে কলাবাগান থানার ওসি মুক্তারুজ্জামান এসআই বেলাল ও আব্দুল মান্নানকে প্রশাসনিক কারণে সাময়িক দরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা থেকেই তাদেরকে বরখাস্তেরা আদেশ কার্যকর করা হয়েছে। অভিযোগকারী বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কলামি স্ট ডঃ আব্দুল ওয়াদুদ অভিযোগ করেন ২৯ এপ্রিল রাত দেড়টার সময় ওসি মুক্তারুজ্জামান নেতৃত্বে একদল পুলিশ জোরপূর্বক আমার বাসায় ঢুকে। তারা দরজা ভেঙ্গে প্রায় ছয় ঘন্টা আমার বাসায় তান্ডব সৃষ্টি করে ডাকাতির উদ্দেশ্যে কিছু মালামালও নেয়। এ সময় আমার কাছে এক কোটি টাকা দাবি করে। আমি বাসা থেকে নগদ দুই লাখ টাকা তাদের প্রদান করি। বাকি টাকা পরে দেয়া হবে বলে আমি তাদের হাত থেকে রক্ষা পাই। তারা আমার বাসভবনে দীর্ঘ ছয় ঘন্টা তছনছ চালায়। এ বিষয়ে আমি পুলিশের উদ্বোধন কর্তৃপক্ষ বরাবরে অভিযোগ করেছি।
আরও পড়ুন: জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা পদক পেল বাংলাদেশ পুলিশের নারী কন্টিনজেন্ট
এর আগে গত ২ মে এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড.আব্দুল ওয়াদুদ। পরে গতকাল রোববার অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে পুলিশ।
অভিযোগে আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, গত ২৯ এপ্রিল মধ্যরাতে কলাবাগান থানার এসআই বেলালের নেতৃত্বে কয়েকজন পুলিশ ও ১৫ থেকে ২০ জনের একদল সন্ত্রাসী বাড়িতে জোর করে ঢুকে পড়ে। আমার ম্যানেজার ৯৯৯ এ টেলিফোন করলে শাহবাগ ও নিউমার্কেট থানার টহল টিমের ২টি গাড়ি এসে বাড়ির সামনে মেইন রোডে থামে। ম্যানেজার তখন দেখতে পান কলাবাগান থানার ওসি মোক্তার হোসেন নিউমার্কেট ও শাহবাগের টহল টিমকে চলে যেতে বলেন।
আরও পড়ুন: দুদক ও গোয়েন্দা সংস্থার নাম ভাঙিয়ে মাহদীর প্রতারণা বাণিজ্য
তখন এক ভাড়াটিয়া ও নাইট গার্ড ওই টহল টিমকে বিষয়টি জানাতে চাইলে কলাবাগান থানার ওসি তাদের দুজনকে পুলিশের গাড়িতে তোলার নির্দেশ দেন, যা বাসার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ রয়েছে।
এদিকে বাড়ির মধ্যে ঢুকে কয়েকজন পুলিশ ড. আব্দুল ওয়াদুদের ঘরের তৃতীয় তলার দরজা ভাঙার চেষ্টা করে। গভীর রাতে সন্ত্রাসী তাণ্ডব ও দরজা ভাঙার শব্দে আশপাশের লোকজনদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়। একটি দরজা ভাঙার পর দ্বিতীয় দরজা ভাঙার সময় তিনি কলাবাগান থানার ওসিকে সাহায্যের জন্য ফোন দেন। ওই সময় ওসি তাকে পুলিশের সঙ্গে বের হয়ে আসতে বলেন। সেই সঙ্গে আরও বলেন, ডিবির লোক এসেছে তাদেরকে সহযোগিতা করতে। কোনো উপায় না দেখে পুলিশের সঙ্গে থানায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং দরজা খুলে দেই। কিন্তু দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে এসআই বেলাল ও মান্নান আমাকে ধাক্কা মেরে আবার ঘরের ভেতরে টেনে নেয় এবং উগ্রভাবে আমার কাছে কী কী অস্ত্র আছে তা জানতে চায়।
কিছুক্ষণ পর মান্নান নামের একজন পুলিশ সদস্য আমাকে একটু আড়ালে নিয়ে বলেন, এই মুহূর্তে ১ কোটি টাকা দিতে পারলে আমার থানায় যেতে হবে না। বাড়িতে রেখে যাবে। কী মামলা হয়েছে জানতে চাইলে তারা জানায়, কোনো মামলা হয়নি তারা টাকার জন্য এসেছে। যদি টাকা না দেই তাহলে আমার বিরুদ্ধে ১০টি মামলা দেওয়া হবে।
ভুক্তভোগী বলেন, উপায় না পেয়ে ২ লাখ টাকা পুলিশ সদস্য বেলাল ও মান্নানের হাতে দেই। ব্যাংকিং আওয়ারের মধ্যে বাকি টাকা দেওয়ার শর্তে ৩জন সিভিল ড্রেস পরা ব্যক্তিকে আমার পাহারায় রেখে যায়। তারা নিজেদেরকে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়েছে। এমনকি যাওয়ার সময় এসআই বেলাল বাড়িতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি এ রকম একটি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও নিয়েছে ভিডিও ধারণ করে।
ওসির এমন চাঁদাবাজি, অর্থ আদায়, ভাঙচুর, লুটপাট ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকির অভিযোগের সঠিক তদন্ত ও যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি ডিএমপি কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ করলে ডিএমপি তাদের সাময়িক প্রত্যাহার করেন।