না ফেরার দেশে চলে গেলেন কবি আবুবকর সিদ্দিক

বাংলা সাহিত্যাকাশ থেকে ঝরে গেল আরও একটি আলোকিত নক্ষত্র। অনেকটা নীরবে নিভৃতে চলে গেলেন দেশের প্রতিভাবান কবি আবু বকর সিদ্দিক (৮৭)। আজ বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) ভোর পৌনে ৬টার দিকে খুলনার সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে কবি ৫ মেয়ে ও ১ ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
বাগেরহাটের গোটাপাড়া গ্রামে ১৯৩৪ সালে জন্ম নেওয়া কবির মৃত্যু বাংলা সাহিত্যের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। সাহিত্যভুবনে আবুবকর সিদ্দিক স্বল্পালোচিত, অথচ বহুমুখী প্রতিভাগুণে সমৃদ্ধ এক বিশেষ সাহিত্যব্যক্তিত্ব ছিলেন। কবি আবু বকর সিদ্দিকের কবিতা ও গল্প-উপন্যাসের ভাষা স্বতন্ত্র ও স্বকীয়তা ছিল।
আরও পড়ুন: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
কবি আবু বকর সিদ্দিকের কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা আঠারোটি: ধবল দুধের স্বরগ্রাম (১৯৬৯), বিনিদ্র কালের ভেলা (১৯৭৬), হে লোকসভ্যতা (১৯৮৪), মানুষ তোমার বিক্ষত দিন (১৯৮৬), হেমন্তের সোনালতা (১৯৮৮), নিজস্ব এই মাতৃভাষায় (১৩৯৭), কালো কালো মেহনতী পাখি (২০০০), কংকালে অলংকার দিয়ো (২০০১), শ্যামল যাযাবর (২০০০), মানব হাড়ের হিম ও বিদ্যুৎ (২০০২), মনীষাকে ডেকে ডেকে (২০০২), আমার যত রক্তফোঁটা (২০০২), শ্রেষ্ঠ কবিতা (২০০২), কবিতা কোব্রামালা (২০০৫), বৃষ্টির কথা বলি বীজের কথা বলি (২০০৬), এইসব ভ্রণশস্য (২০০৭), বাভী (২০০৮), নদীহারা মানুষের কথা (২০০৮) ইত্যাদি এবং ছড়াগ্রন্থ: হট্টমালা (২০০১)। এসব কাব্যরচনার পাশাপাশি তিনি ক্রমাগত নির্মাণ করেন অবিনাশী গণসংগীত, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা ও জীবনীগ্রন্থ। তার প্রথম গ্রন্থ ধবল দুধের স্বরগ্রাম। তার একটি মাত্র ছড়াগ্রন্থ হট্টমালা (২০০১)।
তাঁর প্রকাশিত ছোটগল্পগ্রন্থ: ভূমিহীন দেশ (১৯৮৫), চরবিনাশকাল (১৯৮৭), মরে বাঁচার স্বাধীনতা (১৯৮৭), কুয়ো থেকে বেরিয়ে (১৯৯৪) এবং ছায়াপ্রধান অঘ্রান (২০০০)।
আরও পড়ুন: কবি এনামূল হক পলাশ, নিমগ্ন এক কাব্যসাধক
তার প্রকাশিত উপন্যাস চারটি: দক্ষিণবঙ্গের জনজীবন নিয়ে রচিত জলরাক্ষস (১৯৮৫, দ্বি. প্র. ২০০১), উত্তরবঙ্গের খরাপীড়নের ভয়াবহ শিল্পনির্মাণ খরাদাহ (১৯৮৭, দ্বি. প্র. ২০০০), স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনের পটভূমিতে রচিত বারুদপোড়া প্রহর (১৯৯৬) এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের আলেখ্য একাত্তরের হৃদয়ভস্ম (১৯৯৭)।
তাঁর প্রকাশিত প্রবন্ধগ্রন্থ: কালের কলস্বর (২০০১) ও সাহিত্যের সংগপ্রসংগ (২০০১)। জীবনীগ্রন্থ রমেশচন্দ্র সেন (১৯৯২)। স্মৃতিকথা সাতদিনের সুলতান (২০০২), প্রীতিময় স্মৃতিময় (২০১০) এবং স্মরণের মুখশ্রী (২০১১)।
সাহিত্যে অবদানের জন্য কবি আবু বকর সিদ্দিক ভূষিত হয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে (১৯৮৮), বাংলাদেশ কথাশিল্পী সংসদ পুরস্কার, বঙ্গভাষা সংস্কৃতি প্রচার সমিতি পুরস্কার (কলকাতা), খুলনা সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, বাগেরহাট ফাউন্ডেশন পুরস্কার, ঋষিজ পদকসহ দেশি-বিদেশি বহু পুরস্কার ও সম্মাননায়।