বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐচ্ছিক ছুটি নেওয়ায় সচিবালয়ে কর্মচাঞ্চল্য ফেরেনি

ঈদুল ফিতরের ৫ দিনের টানা ছুটি শেষে খুলেছে অফিস। তবে এখনও পুরো কর্মচাঞ্চল্য ফেরেনি। সোমবার (২৪ এপ্রিল) ঈদের পর প্রথম কর্মদিবসে সচিবালয় প্রায় ফাঁকা। বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐচ্ছিক ছুটিতে রয়েছেন।
এদিন সকাল থেকে সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
আরও পড়ুন: আগামী নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বড় চ্যালেঞ্জ: সিইসি
এক মাস রোজা পালন শেষে গত শনিবার (২২ এপ্রিল) দেশে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। গত ১৯ এপ্রিল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি শুরু হয়। তাদের সেই ছুটি শেষ হয় রোববার (২৩ এপ্রিল)।
সোমবার সকাল থেকে সচিবালয়ের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ঘুরে দেখা গেছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি খুবই কম। বেশিরভাগ মন্ত্রণালয়ের কক্ষগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। এদিকে দুপুর ১২টার দিকে সচিবালায় ৬ নম্বর ভবনের সামনে একই রকম পাঞ্জাবি পড়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছবি তুলতে দেখা গেছে।
আরও পড়ুন: ৮ কোটি ২০ লাখ টাকা ফেরত পেয়েছেন হজযাত্রীরা
কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, যারা দূর-দূরান্তে ঈদ করতে গেছেন, তারা সবাই ঐচ্ছিক ছুটি নিয়েছেন। তাই উপস্থিতি কম।
ঈদের পর প্রথম কর্মদিবসে সচিবালয়ের বারান্দা, সিড়ি, লিফট, সর্বত্রই ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় চলছে। একে অপরকে দেখা মাত্রই বুকে জড়িয়ে নিচ্ছেন।
সকাল ১০টায় পাঁচ নম্বর ভবনের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নিচতলায় এক নম্বর কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পাঁচজনের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু তিনজনই রয়েছেন ছুটিতে।
এ ভবনের নম্বর ভবনের সরকারি আবাসন পরিদপ্তরের প্রশাসন শাখায় মোট কর্মকর্তা-কর্মচারী ২৮ জন। কিন্তু অফিস করছেন মাত্র ছয়জন। এ কক্ষের উচ্চমান সহকারী তালাশ উদ্দিন বলেন, ‘বেশিরভাগ লোকজনই ছুটিতে আছেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মীও আসেননি। আমি আমরা টেবিল পরিষ্কার করে কোনোরকমে বসেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকায় ঈদ করেছি। এজন্য আসতে পেরেছি। যারা গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে গেছেন, তাদের কেউ আসেননি। সবাই ঐচ্ছিক ছুটিতে রয়েছেন।’
আবাসর পরিদপ্তরের সহকারী হিসাবরক্ষক বলেন, ‘আমার বাড়ি ঝালকাঠি। আবহাওয়া ভালো না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে বাড়ি যাইনি। কোরবানিতে গ্রামের বাড়িতে যাবো। আমার কক্ষের বেশিরভাগ লোক ছুটিতে আছেন। কারণ গ্রামের ঈদ করে একদিন পরই অফিসে আসা কষ্টকর।’
ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. আব্বাছ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের মন্ত্রণালয়ের ২০ শতাংশের মতো কর্মকর্তা-কর্মচারী ছুটিতে রয়েছেন। অনেকে মনে করেছিলেন রোজা ৩০টি হবে, সোমবার পর্যন্ত ছুটি থাকবে। তারা সেভাবেই গেছেন, তারা তো আর আজ আসবেন না।’
সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ বলেছেন, ‘সচিবালয়ে উপস্থিতির হার ৫০ শতাংশেরও নিচে। উপস্থিতি স্বাভাবিক হতে আগামী সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।’
এদিন আবার অনেককে দেরি করেও অফিসে আসতে দেখা গেছে। তারা গ্রাম থেকে সরাসরি এসে অফিস করছেন। সচিবালয়ে চার ও পাঁচ নম্বর ভবনের মাঝামাঝি স্থানে গাড়ি পার্কিংয়ের স্থানটি অনেকটাই ফাঁকা পড়ে আছে। লিফটগুলোর সামনেও ভিড় নেই।’
এবার শবে কদরের ছুটির পর ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার আগে গত ২০ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) অফিস খোলা ছিল। ঈদুল ফিতরের ছুটির সঙ্গে ওইদিন (২০ এপ্রিল) বাড়তি একদিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। মূলত দূর-দূরান্তে থাকা প্রিয়জনদের সঙ্গে যারা ঈদ উদযাপন করতে যাবেন তাদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে একদিন বাড়তি ছুটির মাধ্যমে টানা পাঁচদিনের ছুটির ব্যবস্থা করেছিল সরকার।
আগের সূচিতেই ফিরেছে অফিস
প্রতি বছরই রমজান মানে অফিস সূচিতে পরিবর্তন আনে সরকার। অন্যান্য বছরের মতো এবারও রমজান মাসে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অফিস করেছেন।
সোমবার থেকে রমজানের আগের সূচিতে ফিরেছে অফিস। অর্থাৎ সরকারি অফিস চলবে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
গত ১১ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, ঈদপরবর্তী সময়ে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস রোববার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে।
জরুরি পরিষেবাসমূহ নতুন অফিস সময়সূচির আওতার বাইরে থাকবে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এবং ব্যাংক, বিমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অফিস সময়সূচি নিজ নিজ কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছিল।