আজ প্রবারণা পূর্ণিমা

Sadek Ali
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ৮:২৩ পূর্বাহ্ন, ০৫ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১:২০ অপরাহ্ন, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

বিশ্বের বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবর দান ও প্রবারণা পূর্ণিমা আজ রবিবার। আড়াই হাজার বছর আগে গৌতম বুদ্ধ ‘বুদ্ধত্ব’ লাভের পর আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা তিথি পর্যন্ত তিন মাস বর্ষাবাস সমাপনীতে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন করেন বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা।

বৌদ্ধধর্মীয় গুরুরা সেই থেকে বর্ষাবাস শেষে দিবসটি পালন করে আসছেন। তাই ভিক্ষুসংঘের ত্রৈমাসিক বর্ষাব্রত শেষে আসে এ প্রবারণা তিথি। প্রবারণা হলো আত্মশুদ্ধি ও অশুভকে বর্জন করে সত্য ও সুন্দরকে বরণের অনুষ্ঠান। প্রবারণা পূর্ণিমার পরদিন থেকে এক মাস দেশের প্রতিটি বৌদ্ধবিহারে শুরু হবে কঠিন চীবর দানোত্সব।

আরও পড়ুন: জুমার দিনে মুসলমানদের ১১ টি বিশেষ আমল

এ উৎসবে পুণ্যের আশায় বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা ভিক্ষুসংঘকে ত্রিচীবর (বিশেষ পোশাক) বা চার খণ্ডের পরিধেয় বস্ত্র দান করেন। যাতে রয়েছে দোয়াজিক, অন্তর্বাস, চীবর ও কটিবন্ধনী এবং অন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী।

জানা যায়, এ ত্রিচীবর তৈরির জন্য প্রস্তুতিস্বরূপ প্রথমে তুলার বীজ বোনা হয়, পরে তুলা সংগ্রহ করা হয়, তা থেকে সুতা কাটা হয়, সেই সুতায় রং করা হয় গাছগাছড়ার ছাল বা ফল থেকে তৈরি রং দিয়ে এবং সবশেষে নানা আচার অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় নিয়মকানুন মেনে মাত্র ২৪ ঘণ্টায়, অর্থাৎ এক দিনের ভেতর তৈরি করা হয় এ ত্রিচীবর। এ পোশাক বোনায় ব্যবহার করা হয় বেইন বা কাপড় বোনার বাঁশে তৈরি ফ্রেম। এ রকম বেইনে একসঙ্গে চার জন কাপড় বুনে থাকেন। এভাবে ২৪ ঘণ্টা পর তৈরি হওয়া সেসব পবিত্র চীবর, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের হাতে তুলে দেওয়া হয় কঠোর ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে। বৌদ্ধধর্ম মতে, কঠিন চীবর দান হলো শ্রেষ্ঠ দান; এর মাধ্যমে অর্জিত পুণ্য পরবর্তী জীবনেও সুফল দান করে এবং নির্বাণ লাভের পথ প্রশস্ত করে।

আরও পড়ুন: মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট দিয়েও করা যাবে হজযাত্রী নিবন্ধন

প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন। বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব বৌদ্ধধর্মাবলম্বীকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা। মহামতি গৌতম বুদ্ধ আজীবন মানুষের কল্যাণে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় অহিংসা, সাম্য ও মৈত্রীর বাণী প্রচার করেছেন। শান্তি ও সম্প্রীতির মাধ্যমে আদর্শ সমাজ গঠনই ছিল তার মূল লক্ষ্য। তার আদর্শ মানবিকতা ও ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল। তার অহিংস বাণী ও জীবপ্রেম আজও বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। বিশ্বে বিরাজমান অস্থিতিশীল অবস্থা দূরীকরণ ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বুদ্ধের শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে হাজার বছরের বৌদ্ধ ঐতিহ্য মিশে আছে। প্রাচীনকালে বর্তমান বাংলাদেশের অঞ্চলটি এশিয়ার বৌদ্ধধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল, যার প্রমাণ হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার দেখা যায়।’

প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশন রাজধানীর মেরুল বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, ভিক্ষুসংঘের প্রাতরাশ, মঙ্গলসূত্র পাঠ, বুদ্ধপূজা, পঞ্চশীল ও অষ্টাঙ্গ উপসথ শীল গ্রহণ, মহাসংসদান, অতিথি আপ্যায়ন, পবিত্র ত্রিপিটক থেকে পাঠ, আলোচনাসভা, প্রদীপপূজা, আলোকসজ্জা, বিশ্বশান্তি কামনায় সম্মিলিত বুদ্ধোপাসনা, ফানুস উড্ডয়ন ও বুদ্ধকীর্তন।