স্কুলে অনুপস্থিত থেকেই মাস শেষে বেতন নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষিকা
- প্রধান শিক্ষক না থাকায় স্কুলে নানান সংকট দেখা দিয়েছে, প্রশাসনিক কার্যক্রম ও শিক্ষার্থীদের পাঠদান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে- সহকারী প্রধান শিক্ষক
- নিরাপত্তাহীনতায় ভূগলে কি স্কুলে যাওয়া সম্ভব। কেন স্কুলে যাচ্ছি না সেটা আপনাকে কেন বলব- প্রধান শিক্ষিকা
নরসিংদীর রায়পুরায় বাহেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তাহমিনা সরকার নামে এক প্রধান শিক্ষিকা প্রায় দেড় বছর ধরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকে মাস শেষে বেতন তুলচ্ছেন। ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ও শিক্ষার্থীদের পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অথচ তিনি নিয়মিত বেতন ভাতা গ্রহণ করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার চান্দেরকান্দি ইউনিয়নের বাহেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় প্রধান শিক্ষক অনুপস্থিত। এবিষয়ে কথা হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সাথে।
স্থানীয় ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়ে ৩১২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে শিক্ষক আছেন ১২ জন। তাহমিনা সরকার ২০১৬ সালের মার্চ মাসে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। সম্প্রীতি স্কুল মাঠে স্থানীয় তরুণদের খেলাধূলায় নিষেধ করার বিরোধের জের ধরে বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হলে ২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর রাতে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে দূর্বৃত্তরা আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে অফিস কক্ষের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও মালামাল পুড়ে যায়। পরে বিদ্যালয়ে কয়েক দফায় অগ্নিসংযোগ ও টিউবওয়েলে বিষ প্রয়োগের মত ঘটনাও ঘটে। পরে প্রধান শিক্ষিকার দায়ের করা অজ্ঞাত নামা মামলায় স্থানীয় তিনজন জেলও খাটেন। এনিয়ে প্রধান শিক্ষিকা তাহমিনা সরকারের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষিকা স্থানীয়দের হামলার শিকার হওয়ার আশংকার অজুহাতে দিনের পর দিন বিদ্যালয়ে রয়েছেন অনুপস্থিত। প্রধান শিক্ষিকা তাহমিনার প্ররোচনায় গত ৬ মাস আগে নৈশপ্রহরী মামুন চাকরি ছেড়ে দেশ ত্যাগ করে বিদেশে পাড়ি জমান। বর্তমানে এলাকার পরিবেশ শান্ত থাকলেও প্রধান শিক্ষিকা তাহমিনা সরকার নানা অজুহাতে বিদ্যালয়ে আসেন না। প্রায়ই উপজেলা অফিসে গিয়ে বসে থাকেন তিনি। সেখানে বসেই তিনি চালাচ্ছেন স্কুল।
আরও পড়ুন: কাহালু বাটালদিঘী মহাশ্মশানে লীলা কীর্তন ও প্রসাদ বিতরণ
স্কুলের দায়েরকৃত মামলায় সদ্য জামিন প্রাপ্ত আসামী নয়ন বলেন, মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা নির্দোষ। প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন সময়ে স্কুলটির রেজাল্ট ও শিক্ষার পরিবেশ ভালোই চিল। এখন খুব খারাপ অবস্থা। আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসুক।
অপর আসামী (জামিন প্রাপ্ত) আব্দুল্লাহ বলেন, স্কুলে আগুন লাগার পরও নৈশপ্রহরী মামুন দরজা খুলে না। পরে স্থানীয়রা গিয়ে আগুন নেবান। এ ঘটনায় বিনাদোষে আমি সহ তিনজন জেল খেটেছি। তাদের আসল ঘটনা ফাঁস হবে বলে মামুনকে বিদেশ পাঠিয়েছে তারা। পাশাপাশি প্রধান শিক্ষক স্কুলে না এসে বসে বসে বেতন নিচ্ছেন।
আরও পড়ুন: বগুড়ায় ‘রক্তস্পন্দন’-এর কিউআর কোড কার্যক্রমের উদ্বোধন করলেন ডা. পাভেল
সহকারী শিক্ষিকা নিহার সুলতানা বলেন, আগুন লাগানো ও টিউবওয়েলে বিষ দেওয়ার ঘটনার পর থেকেই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে আর আসছেন না। আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মিলেমিশে বিদ্যালয়ের পাঠদান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও অন্যান্য কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
সহকারী শিক্ষিকা রাফেজা বেগম, সামসুন্নাহার খন্দকার সুইটি বলেন, প্রধান শিক্ষক না থাকায় স্কুলে নানান সংকট দেখা দিয়েছে, প্রশাসনিক কার্যক্রম ও শিক্ষার্থীদের পাঠদান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বিদ্যালয়ে উপস্থিত শিক্ষার্থীরাও প্রধান শিক্ষিকার অনুপস্থিতিতে হতাশ। তারা জানায়, প্রধান শিক্ষক প্রায় এক বছর বিদ্যালয়ে আসেন না। এতে আমাদের পড়াশোনায় সমস্যা হচ্ছে। আমরা চাই তিনি দ্রুত স্কুলে ফিরে আসুন।
বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি খন্দকার শাহাদাত হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “একজন সরকারি কর্মকর্তা এতদিন বিদ্যালয়ে না এসে কীভাবে বেতন নেন, তা অবাক করার মতো বিষয়। এ ঘটনা প্রশাসনের জন্যও লজ্জাজনক। যদি তিনি স্কুলে আসতে না চান, তবে তাঁর পরিবর্তে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হোক। আমরা চাই স্কুল ভালো চলুক।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক তাহমিনা সরকারের মুঠোফোনে জানান, নিরাপত্তা হিনতায় ভূগলে কি স্কুলে যাওয়া সম্ভব। কেন স্কুলে যাচ্ছি না সেটা আপনাকে কেন বলব। উর্ধতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয় জানে।
সভাপতি ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা নূরে আলম বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সোহরাফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, প্রধান শিক্ষক তাহমিনা সরকারের ভাষ্যমতে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। আগের ডিপিও স্যারের কাছ থেকে শুরুতে তিন মাসের ছুটি নিয়েছিলেন, পরে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মৌখিক অনুমতিতে অফিসে আসতেন কিন্তু স্কুলে যেতেন না। আমি সম্প্রতি তাঁকে নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে নির্দেশ দিয়েছি। তিনি যদি না যান, নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।





