কলরেকর্ড ফাঁসের জেরে থাই প্রধানমন্ত্রী বরখাস্ত

থাইল্যান্ডে রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন শিনাওয়াত্রার একটি ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর। এই ঘটনার জেরে মঙ্গলবার (১ জুলাই) থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত তাকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। আদালতের নয় সদস্যের বেঞ্চের মধ্যে সাতজন বিচারক বরখাস্তের পক্ষে রায় দেন। আদালত পেতংতার্নের বিরুদ্ধে নৈতিক লঙ্ঘনের অভিযোগ গ্রহণ করেছে এবং তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ১৫ দিন সময় দিয়েছে।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় পেতংতার্ন সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের রায় আমি মেনে নিয়েছি। আমি সব সময় আমার দেশের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।
আরও পড়ুন: গাজায় অনাহার-অপুষ্টিতে শিশুসহ আরও ১১ জনের মৃত্যু
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই রায়ের ফলে থাইল্যান্ডে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও তীব্র হতে পারে। থামাসাত বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিশ্লেষক পুরাবিচ ওয়াতানাসুক বলেন, “চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করবেন। তবে এই অনিশ্চয়তা সরকারের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলবে।
ধারণা করা হচ্ছে, উপপ্রধানমন্ত্রী সুরিয়া জুনগ্রুংরুয়াংকিত সাময়িকভাবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে পারেন, যদিও এ বিষয়ে সরকারিভাবে কোনো ঘোষণা আসেনি।
আরও পড়ুন: ইউক্রেন নিয়ে আলোচনায় বসছেন ট্রাম্প-পুতিন
এর আগেও থাই সাংবিধানিক আদালত একই ধরনের অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনকে বরখাস্ত করেছিল। রাজতান্ত্রিক অভিজাতদের ঘনিষ্ঠ এই আদালত এবং নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বিরোধীদলীয় নেতাদের দমন করার অভিযোগ রয়েছে।
মে মাসে থাই-ক্যাম্বোডিয়া সীমান্তে সংঘর্ষে এক ক্যাম্বোডিয়ান সেনা নিহত হওয়ার পর থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্নকে ক্যাম্বোডিয়ার সিনেট প্রেসিডেন্ট হুন সেনের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে শোনা যায়। এই ফোনালাপে তিনি এক উচ্চপদস্থ থাই সেনা কর্মকর্তার সমালোচনাও করেন, যা জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।
ফাঁস হওয়া এই কথোপকথন ঘিরে রাজধানী ব্যাংককে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানায়। এছাড়া পেতংতার্নের বিরুদ্ধে আরেকটি নৈতিক লঙ্ঘনের অভিযোগের তদন্ত করছে থাইল্যান্ডের জাতীয় দুর্নীতি দমন কমিশন, যা থেকেও তার অপসারণের সম্ভাবনা রয়েছে।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই থাই রাজা মহা বজিরালংকর্ণ গতকাল পেতংতার্নের মন্ত্রিসভায় রদবদল অনুমোদন দিয়েছেন। ফাঁস হওয়া ফোনালাপের জেরে ক্ষমতাসীন জোট থেকে একটি বড় দল সরে যাওয়ায় এই পরিবর্তন আনা হয়। নতুন মন্ত্রিসভায় পেতংতার্ন নিজেই সংস্কৃতি মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তবে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়ায় তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
একই দিনে একটি পৃথক ঘটনায়, পেতংতার্নের পিতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন শিনাওয়াত্রা ব্যাংককের একটি আদালতে হাজির হন রাজা-অপমানবিষয়ক মামলায়। ২০১৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় এক সাক্ষাৎকারে রাজতন্ত্র নিয়ে মন্তব্য করার কারণে তার বিরুদ্ধে লেসবাজেস্ট (lèse-majesté) আইনে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে তার সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক থিতিনান পংসুদিরাক বলেন, এই দুটি মামলার মধ্যে অস্বীকার করা যায় না এমন সংযোগ রয়েছে। শিনাওয়াত্রা পরিবার এখন সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকটের মুখোমুখি।