বাংলাদেশ-চীন-পাকিস্তানের স্বার্থের সম্ভাব্য মিলকে হুমকি হিসেবে দেখছে ভারত

বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের অভিন্ন স্বার্থের সম্ভাব্য মিল ভারতের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান (চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ - সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান। মঙ্গলবার থিঙ্ক ট্যাঙ্ক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ)-এর এক আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আলোচনায় তিনি সরাসরি কোনও দেশের নাম উল্লেখ না করলেও বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক সংকটকে বহিরাগত শক্তিগুলো প্রভাব বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, যা ভারতের জন্য গুরুতর নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে।
আরও পড়ুন: ভারতের বিপক্ষে রায় আন্তর্জাতিক আদালতের, স্বাগত জানাল পাকিস্তান
জেনারেল চৌহান বলেন, “বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি স্বার্থের সম্ভাব্য মিল রয়েছে। আর এটি ভারতের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।”
আলোচনায় সম্প্রতি পাকিস্তানের ভূখণ্ডে পরিচালিত ভারতীয় সামরিক বাহিনীর ‘অপারেশন সিন্দুর’ প্রসঙ্গও উঠে আসে। এই প্রসঙ্গে জেনারেল চৌহান বলেন, “সম্ভবত এই প্রথমবার দুটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে।”
আরও পড়ুন: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে ৬৯ জন নিহত, মোট প্রাণহানি ৬০ হাজার ছাড়াল
তিনি বলেন, যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানকে চীন কতটা রাষ্ট্রীয় সহায়তা দিয়েছিল, তা নির্ধারণ করা কঠিন হলেও ভারতের উত্তর সীমান্তে তখন কোনও অস্বাভাবিক তৎপরতা দেখা যায়নি।
জেনারেল চৌহান আরও বলেন, “অপারেশন সিন্দুর অনন্য এক অভিজ্ঞতা এবং তা সারা বিশ্বের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “ভারত কখনই পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইলের কাছে মাথা নত করবে না।”
যুদ্ধের নতুন পরিসর ও প্রস্তুতির বিষয়ে ভারতীয় সেনাপ্রধান জানান, ভবিষ্যতের যুদ্ধ কেবল প্রচলিত সীমায় সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং সাইবার ও ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক যুদ্ধক্ষেত্রেও বিস্তৃত হতে পারে। ভারতের পারমাণবিক নীতিতে ‘প্রথমে ব্যবহার না করার’ (No First Use) অবস্থান থাকলেও, প্রচলিত যুদ্ধের ঝুঁকি থেকেই যায় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, “ভারতকে সব ধরনের যুদ্ধ—প্রচলিত ও অপ্রচলিত—উভয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। অস্ত্র হলো প্রতিরোধের উপায়, যুদ্ধ চালানোর জন্য নয়।”
আলোচনায় কাশ্মিরের পেহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সেই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারত প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেয় এবং এতে পাকিস্তানের সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলো ধ্বংস হয়। তার ভাষায়, “আপনি একে প্রতিশোধ বা প্রতিরোধ যাই বলুন না কেন, মূল উদ্দেশ্য ছিল ভবিষ্যতের হামলা ঠেকানো।”
পাকিস্তান পরবর্তী সময়ে এই সংঘাতকে আরও বড় করে প্রচলিত যুদ্ধের পর্যায়ে নিয়ে যায় বলেও মন্তব্য করেন জেনারেল চৌহান।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, টাইমস অব ইন্ডিয়া