আহত ১৪, এলাকায় উত্তেজনা

গোবিন্দগঞ্জে ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার বিরোধে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর

Sanchoy Biswas
এ.এস.এম রবিউল হাসান, গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৯:৩৬ অপরাহ্ন, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৪:২২ পূর্বাহ্ন, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামারদহ ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি মাহমুদ হাসানের সার ও কীটনাশকের দোকানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে উপজেলার চাপড়ীগঞ্জ বাজারে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১৪ জন আহত হয়। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি উপজেলার বান্না গ্রামে এক ছেলে ও মেয়েকে আটক করে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে মীমাংসা করেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হাসানুর ইসলাম রিপন। এই ঘটনায় ছাত্রদল নেতা মাহমুদ হাসান প্রতিবাদ করলে তাদের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। এর জের ধরেই রিপন তার লোকজন নিয়ে মাহমুদ হাসানের দোকানে হামলা চালান। এ সময় দোকানে থাকা লোকজন বাঁধা দিলে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন: নাসিরনগরে বিএনপির উদ্যোগে দলের জাঁকজমকপূর্ণ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন

এ বিষয়ে কামারদহ ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি মাহমুদ হাসান অভিযোগ করে বলেন, রিপন চিহ্নিত আওয়ামী লীগের লোকজনকে নিয়ে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স তাওহীদ ট্রেডার্সে হামলা চালায়। এতে তার পক্ষের তানভীরসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। দোকান ভাঙচুর ও মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত করার পাশাপাশি নগদ টাকা লুট করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। হামলায় আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

তার অভিযোগ, রিপন দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদলসহ বিভিন্ন নেতাদের নাম ভাঙিয়ে বিরোধ মীমাংসা ও নানা অজুহাতে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে আসছেন। সম্প্রতি এক ছেলে ও এক মেয়েকে আটকের ঘটনায় রিপন প্রথমে ছেলের পকেটে থাকা ১৮ হাজার টাকা এবং পরে আরও ৫০ হাজার টাকা নেন। এই ঘটনার প্রতিবাদ করায় পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেন মাহমুদ। তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: কাঞ্চন পৌরসভার শতবর্ষী উকিলবাড়ি সরকারি খাল উদ্ধারে প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযান

অন্যদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হাসানুর ইসলাম রিপন বলেন, সালিশে যে ৫০ হাজার টাকা পাওয়া গিয়েছিল, তা সংশ্লিষ্ট ছেলেদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এরপরও মাহমুদ হাসান বিষয়টি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি করেন। এ কারণে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গেলে উল্টো তার লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে তার পক্ষের চারজন আহত হয়েছেন বলেও দাবি করেন রিপন। তিনিও থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানান।

এ বিষয়টি নিশ্চিত করে গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বুলবুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অভিযোগ দুটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে, এই ঘটনায় সোমবার রাতেই উভয়পক্ষ গোবিন্দগঞ্জ প্রেসক্লাবে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করে। ছাত্রদল নেতা মাহমুদ হাসানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও মারপিটের প্রতিবাদে সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় সংবাদ সম্মেলন করে উপজেলা ছাত্রদল। এতে বক্তব্য রাখেন উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সৈয়দ আল আমিন রনি, সদস্য সচিব মনির হোসেন সরকার ও ভুক্তভোগী ছাত্রদল নেতা মাহমুদ হাসান। সংবাদ সম্মেলনে হামলার সঙ্গে জড়িত হাসানুর ইসলাম রিপনসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

অপরদিকে, এই সংবাদ সম্মেলনের এর দেড় ঘণ্টা পর রাত বারোটায় গোবিন্দগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হাসানুর ইসলাম রিপন। তিনি অভিযোগ করে জানান, উপজেলা ছাত্রদলের করা সাংবাদিক সম্মেলনে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি বলেন, মৎস্যজীবিলীগের কামারদহ ইউনিয়ন শাখার প্রচার সম্পাদক এখন ছাত্রদল সেজে ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি হয়েছে। সেই এখন বিভিন্ন ভাবে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করছে। এই আওয়ামী দোসর তার দলবল নিয়ে সোমবার সন্ধ্যার দিকে আমি সহ আমার লোকজনদের ওপর স্থানীয় চাপড়ীগঞ্জ বাজারে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে আমার মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা লুটে নেয়। এসময় আমার পক্ষের চারজন আহত হয়। আহতদের গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনি তার উপর হামলাকারী মাহমুদ হাসানসহ আওয়ামী দোসরদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদল ও যুবদলের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।